সর্বশেষ :
জকিগঞ্জে নোমান হত্যা : আসামি সুমনের ৪ দিনের রিমান্ড, এবার স্ত্রীর নতুন মামলা প্রেমের পরিণতি অনশন: স্বামীর ঘরে উঠতে বিশ্বনাথের অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর আহাজারি ট্রেনের ৭০০ টিকিটসহ ৩ ‘কালোবাজারি’ আটক, ১৫ দিনের কারাদন্ড এসএমপি’র ৩২ঘন্টার অভিযান: সিলেট নগরীতে গ্রেফতার ৬৭ সিলেটে যে সকল রাস্তায় গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিল পুলিশ বুধবার থেকে এক ক্লিকে জামিননামা চলে যাবে কারাগারে হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের আমৃত্যু, ১৪ জনের যাবজ্জীবন এবার রেলওয়ে স্টেশনে ডিসির ঝটিকা অভিযান ১ কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট ও বিদশেী অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে আটক ১ জামালগঞ্জে হাওরের বুকে নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় — হেমন্তে পাও, বর্ষায় নাও ভরসা
আলী আমজদের ঘড়িঘর ঘেঁষে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ, ক্ষোভ

আলী আমজদের ঘড়িঘর ঘেঁষে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ, ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের ১৫১ বছরের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়িঘরে ভেতরে একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে ঐতিহ্যবাহী এই ঘড়িঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করার অভিযোগ ওঠেছে।

জানা যায়, ঘড়িঘরের ভেতরে জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার অংশবিশেষ আড়াল করে স্মৃতিফলক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনা।

এদিকে, আলী আমজদের ঘড়িঘরের ভেতরে এই স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সোমবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার কারণে সিলেটের মানুষ গর্ব অনুভব করেন, এর একটি হচ্ছে ১৮৭৪ সালে স্থাপিত আলী আমজদের ঘড়ি। আরও কয়েকটি স্থাপনার সঙ্গে এটি ‘সিলেটের প্রতীক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ঘড়িঘরের বেষ্টনীর মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতিফলক। এতে ঘড়িঘরের প্রকৃত স্থাপত্যশৈলী আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, এমনটাই দাবি সমালোচনাকারীদের।

এ ব্যাপারে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি আবদুল করিম কিম বলেন, আলী আমজদের সিলেটের একটি ল্যান্ডমার্ক। সিলেটে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নেই বললেই চলে। কিন্তু ঘড়িঘরের সীমানার মধ্যে যে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটি ঘড়ির মূল কাঠামো, সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের সঙ্গে অসংতিপূর্ণ। এটি প্রাচীন স্থাপনার সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক মূল্য রক্ষার জন্য প্রযোজ্য আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ীও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নষ্ট করে নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা বেআইনী। এ ব্যাপারে আজকে আমরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে ঘটনাস্থলে কিংবা ঘটনাস্থলের পাশে একই নকশায় ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিলেট নগরে চারজন শহীদের স্মরণে এমন স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ গত জুলাই মাসে শুরু হয় এবং আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্মৃতিফলক নির্মাণের স্থান চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বিশেষত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহীদদের শহীদ হওয়ার স্থান দেখিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলী আমজদের ঘড়ির সামনে মো. পাবেল আহমদ কামরুল ও পঙ্কজ কুমার কর শহীদ হন। তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে দুই শহীদ স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে।

এর বাইরে কোর্ট পয়েন্ট মধুবন মার্কেটের সামনে শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি ফলক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৫ টাকা।

স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমী অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, আলী আমজদের ঘড়িঘরের আশপাশের এলাকায় অনেক উন্মুক্ত জায়গা আছে। সেসব জায়গায় স্মৃতিফলক নির্মাণ না করে ঠিক ঘড়িঘর ঘেঁষে এ স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হয়নি। জুলাই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণ অবশ্যই প্রয়োজনীয়, তবে সেটা করতে গিয়ে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার সৌন্দর্য নষ্ট করা ঠিক নয়।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক শামসুল বাসিত শেরো সিলেটটুডেকে বলেন, আলী আমজাদের ঘরি একটি পরিবারের দান করা। এখানে কেন অন্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে? সিলেটে অনেক জায়গা রয়েছে। অন্য কোন জায়গায় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যেতে পারে। এটি দুটি স্থাপনারই গুরুত্ব ও সৌন্দর্য অক্ষুন্ন থাকবে।

সিলেট নগরের সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের জিরোপয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এটি ১৮৭৪ সাল থেকে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেটে সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে।

ঘড়িটি দেখভাল করার দায়িত্বে আছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ঘড়িঘরের বেষ্টনীর মধ্যে দুজন শহীদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশ, গণপূর্তের কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি স্থানটি চূড়ান্ত করেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের ঠিক পাশেই স্মৃতিফলক নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্মৃতিফলকের নিরাপত্তার বিষয়টিও এখানে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ফুটপাত কিংবা উন্মুক্ত জায়গায় স্মৃতিফলক নির্মাণ করে পথচারীদের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা যেন তৈরি না হয়, সেটাও ভাবনায় ছিল।

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা দেছে, ঘড়িঘরের তোপখানামুখী সড়কের সামনের দিকে স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, স্মৃতিফলক নির্মাণে গঠিত কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে সিটি করপোরেশন স্মৃতিফলক নির্মাণ করছে। ঘটনাস্থল, স্মৃতিফলক নির্মাণ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ স্মৃতিফলক নির্মাণের পাশাপাশি ঘড়িঘরের সৌন্দর্যবর্ধন করতে রংও করা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff